আমি আজ এই পোস্টে হরতাল কেন হয়, হরতালের বৈশিষ্ট্য, ইস্যুসমূহ এবং ইহার নেতিবাচক দিকগুলো আলোচনা করব। ইহা হলো বর্তমান বাংলাদেশের একটি প্রধান আলোচ্য ও বিবেচ্য বিষয়। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এটি শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে এবং এর পরিমাণও অনেক। দেশব্যাপী হরতালের পাশাপাশি হয়েছে আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে এটি। তবে আশির দশক থেকে বাংলাদেশে হরতালের তীব্রতা বেড়েছে। অতীতে কালেভদ্রে হরতালের পরিবর্তে এখন আমরা দেখছি ঘন ঘন হরতাল। ইহা জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
এটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একটি কৌশল হিসেবে বহু আগে থেকেই স্বীকৃত। প্রধানত রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে উপমহাদেশের জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ধারায় এর সূচনা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও বাঙালিরা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় সর্বোপরি স্বাধিকারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সভা, সমাবেশ, মিছিল, ধর্মঘট, ঘেরাও এবং অবরোধের পাশাপাশি ইহার কর্মসূচি গ্রহণ করে। তবে বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে হরতালের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের জন্য অকল্যাণকর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হরতালের উৎপত্তি:
হরতাল শব্দটি বাংলাভাষায় গৃহীত হয়েছে গুজরাটি ভাষা থেকে। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে বলা হয়েছে ‘হরতাল [গুজরাটি শব্দ: হর (প্রত্যেক) + তাল (তালা) অর্থাৎ প্রতি দরজায় তালা। শব্দের অর্থ- বিক্ষোভ প্রকাশের জন্য যানবাহন, হাটবাজার, দোকানপাট, অফিস আদালত প্রভৃতি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করা।’ হরতাল বলতে কি বোঝায় তা শব্দের অর্থ থেকে খুবই স্পষ্ট। ইংরেজি ‘জেনারেল স্ট্রাইক’ বা ‘সাধারণ ধর্মঘট’ এবং হিন্দি ‘বন্ধ’ শব্দকে হরতালের সমার্থক বলে ধরে নেয়া যায়।
আরো পড়ুন: ৪১ তম বিসিএস বাংলা প্রশ্ন সমাধান ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত
আদিতে ইহা ছিল ব্যবসায়ীদের কারবার সংক্রান্ত দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি ও প্রতিবাদ প্রকাশের কৌশল হিসেবে দোকানপাট, গুদাম ঘর প্রভৃতি বন্ধ রাখা। ১৯২০-৩০-এর দশকে ভারতের রাজনীতিতে হরতাল নতুন মাত্রা যোগ করে। এ সময় মহাত্মা গান্ধী তার নিজ এলাকা গুজরাটে পরপর অনেকগুলো ব্রিটিশ বিরোধী বন্ধ বা ধর্মঘটের ডাক দিয়ে হরতালকে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের রূপ দেন।
হরতালের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
যে কোনো ন্যায়ভিত্তিক সমাজেই সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশের কতিপয় পথ ও পদ্ধতি থাকে। এ ধরনের প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশের একটি মাধ্যম হলো হরতাল। তবে দেশভেদে এর রকমফের পরিলক্ষিত হয়। নিচে হরতালের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো:
১. মুর্শিদকুলী খানের চাকলা ব্যবস্থা:
নবাব মুর্শিদকুলী খানের সময় চাকলা ব্যবস্থা চালু ছিল। এ ব্যবস্থায় সব ক্ষুদ্র জমিদারকে চাকলাদারদের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করতে বলা হলে ক্ষুদ্র জমিদারেরা তা মেনে নিতে পারেনি। তারা পূর্বের মতো সরাসরি সরকারকে রাজস্ব দেয়ার পক্ষে আরজি জানিয়ে মৃদু প্রতিবাদ গড়ে তোলে।
নবাবী সরকার পদ্ধতিতে দাবিদাওয়া জানানোর জন্য আরজির উপরে অন্য কোনো পদ্ধতিতে দাবিদাওয়া সরকার সহ্য করতো না। আরজির মধ্য দিয়ে পরিচালিত আন্দোলনকে ক্ষুদ্র জমিদাররা নাম দিয়েছিল হুকুমত-ই-বায়াৎ, যার অর্থ খোদ সরকার ও তাদের মাঝামাঝি অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।
২. ডিং বিদ্রোহ:
রংপুরের প্রজা সমাজ ১৭৮৩ সালে ইজারাদার দেবী সিংহের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ডিং বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ডিং ছিল দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত খাজনা দেয়া বন্ধ রাখার আন্দোলন। এ আন্দোলনে প্রজারা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বিদ্রোহ প্রকাশ করেছিল সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত স্থানীয় কর্তাদের বিরুদ্ধে।
৩. ডংকা আন্দোলন:
রংপুরের প্রজাদের ডিং আন্দোলনের আদলে পরবর্তীতে যশোর নদীয়া পাবনার নীল চাষীদের ডংকা আন্দোলন গড়ে উঠে। ডংকা এক রকমের ঢোল। ১৮৫৯-৬০ সালের এ আন্দোলনে বাংলার নীল চাষীরা ডংকা বাজিয়ে ঘোষণা করে দেয় যে, তারা আর নীল চাষ করবে না। একটি ডংকার আওয়াজ শোনামাত্র দূরে আর একটি ডংকা বাজানো মানে ছিল সেখানেও ঐ আন্দোলনের শরিকরা সংহতি ঘোষণা করছে।
৪. জোট:
১৮৫০-৬০ এর দশকে ফরায়েজি আন্দোলনের কৌশল ছিল জোট। জমিদার কর্তৃক বেগ্লাইনি ও অন্যায়ভাবে আরোপিত আবওয়াব (খাজনাতিরিক্ত চাঁদা) আদায়ের বিরুদ্ধে প্রজারা জোট গঠন করে প্রতিরোধ রচনা করে। প্রতি পরগনায় কৃষকদের নিয়ে জোট গঠন করা হয়। স্থানীয় জোটগুলো সংশ্লিষ্ট হয় আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে। আঞ্চলিক জোট সমন্বয়ে গঠিত হয় কেন্দ্রীয় জোট।
৫. ধর্মঘট:
১৮৭৩ সালের পাবনা কৃষক বিদ্রোহ সংগঠকরা যে আন্দোলন পরিচালনা করে তা ছিল আজকের ধর্মঘটের অনুরূপ। ধর্মঘট হচ্ছে হিন্দু কৃষক পরিবারের একটি দেবতার প্রতীকস্বরূপ পাত্র। এ পাত্র স্পর্শ করে প্রজারা প্রতিজ্ঞা করে যে, প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত খাজনা হারের উপরে তারা কোনো বাড়তি খাজনা দিবে না।
৬. ১৯২০-৬০ এর দশক:
১৯২০-এর দশক থেকে ৫০-এর দশক পর্যন্ত হরতাল ও ধর্মঘটকে সমার্থক হিসেবেই গণ্য করা হতো। ষাটের দশক থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনে ইহাকেই ধর্মঘটের চেয়ে অধিকতর জোরদার অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হতে থাকে।
৭. মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে:
স্বাধীন বাংলাদেশে হরতাল মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে গণমানুষকে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে একটি বহুল ব্যবহৃত কৌশল হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিরোধী দলসমূহ জেনারেল এরশাদের শাসনকে (১৯৮২-৯১) অবৈধ ঘোষণা করে ঘনঘন ডেকে প্রশাসনকে অকেজো করে দেয় এবং তার সরকারের পতন ঘটে।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলসমূহ বেগম খালেদা জিয়ার সরকারকে (১৯৯১-৯৬) উপর্যুপরি হরতালের মাধ্যমে তীব্রচাপে রাখে। শেখ হাসিনার প্রশাসনও (১৯৯৬-২০০১) হরতালের চাপ থেকে মুক্ত ছিল না। এরই ধারাবাহিকতায় চার দলীয় জোট সরকার (২০০১-২০০৬) এবং ১৪ দলীয় মহাজোট সরকার ও (২০০৯-বর্তমান) হরতালের অস্ত্র থেকে রক্ষা পায়নি।
আরো দেখুন: ৪০ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি বাংলার প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের হরতালের সাম্প্রতিক প্রবণতা:
বাংলাদেশে হরতালের সাম্প্রতিক প্রবণতা যতই দিন গড়াচ্ছে, মানুষের চিন্তাচেতনার পরিধি যতই প্রসারিত হচ্ছে ততই বাংলাদেশের ইহার চিত্র নতুন মাত্রায় মোড় নিচ্ছে। নিচে বাংলাদেশের হরতালের সাম্প্রতিক প্রবণতা তুলে ধরা হলো:
১. মাত্রাবৃদ্ধি:
দিন দিন শিক্ষার হার বাড়ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে রাজনৈতিক চেতনা, বোধোদয় হচ্ছে গণতান্ত্রিক চেতনার। শুধু কমছে না হরতালের মাত্রা। বাংলাদেশের বিগত পাঁচ দশকের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যত গণতান্ত্রিক অধিকার প্রসারিত হচ্ছে হরতালও যেন তত বেশি হচ্ছে।
২. প্রতিবাদের ভাষা উপেক্ষিত:
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসার পরও হরতাল চলছে। নিপীড়ক শাসকের বিরুদেদ্ধ আন্দোলনের এ চূড়ান্ত হাতিয়ারটি অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে প্রাথমিক হাতিয়ার হিসেবে। মোটকথা বর্তমানে সভা, মিছিল, ধর্মঘট প্রভৃতি গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের ভাষা ছেড়ে বেশি বেশি আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে হরতালের।
৩. একক কিংবা জোটবদ্ধভাবে আহ্বান:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল ডাকছে কখনো এককভাবে, কখনো জোটবদ্ধভাবে। যেমন- বর্তমান বিরোধী দল বিএনপি কখনো এককভাবে সরকারি কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে এটা আহ্বান করে, আবার কখনো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ইহা আহ্বান করে।
৪. আঞ্চলিক ও স্থানীয়ভাবে আহ্বান:
বাংলাদেশে জাতীয়ভিত্তিক হরতালের পাশাপাশি বর্তমানে পালিত হচ্ছে আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে অসংখ্য হরতাল। কখনো নিজ এলাকার এমপির সমর্থনে বন্দী থেকে মুক্তি, অযথা হয়রানি বন্ধ, স্থানীয় সমস্যার সমাধান ইত্যাদি কারণে এ সকল অঞ্চলে হরতালের আহ্বান করা হয়।
বাংলাদেশে হরতালের ইস্যুসমূহ:
নানাবিধ ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে হরতালের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। নিচে এ সকল ইস্যু উল্লেখ করা হলো:
১. মিছিল, সমাবেশে বাধা:
মিছিল, সমাবেশে বাধা বাংলাদেশে হরতালের অন্যতম প্রধান ইস্যু। বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, বিরোধী দলের মিছিল কিংবা আহ্বানকৃত সমাবেশে সরকারি দল বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় প্রায়শই বাধা দান করে। এতে বিরোধী দল তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারহরণের প্রতিবাদে হরতাল আহবান করে।
২. হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ:
বিরোধী দলের নেতাকর্মী বা সাধারণ ও নিরীহ জনগণের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়শই ঘটে। আর প্রতিবাদে বাংলাদেশে হরতাল আহ্বানের ঘটনা বিরল নয়।
৩ . দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি :
বাংলাদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে সহসাই ব্যর্থ হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, নিদারুণ কষ্টের মাঝে দিনাপাত করতে থাকে তারা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েও বিরোধী দল সরকারি দলের ব্যর্থতার অভিযোগ ও দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ সাধারণ মানুষের নাগালে আনার আহ্বান জানিয়ে হরতালের ডাক দেয়।
৪. বাজেটের প্রতিবাদ:
সরকার প্রতিবছর যে বাজেট পেশ করে তা সরকারি পক্ষ থেকে ‘গণমুখী’ বাজেট বলা হলেও বিরোধী দল নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এই বাজেট ‘গরিব মারার বাজেট’, এই বাজেট ‘গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি’ ইত্যাদি অভিযোগ এনে বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করে এবং হরতালের ডাক দেয়।
৫. ধর্মীয় ইস্যু:
ধর্মীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে হরতাল আহ্বানের ঘটনা অহরহ লক্ষ করা ৫ যায়। মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডায় হামলা, ভাংচুর কিংবা ইসলাম ধর্মের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-কে কটূক্তিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক ইসলামী দল ও অন্যান্য সমমনা দলগুলো প্রায়শই হরতালের মত কর্মসূচি ঘোষণা করে।
৬. দমনপীড়ন রোধ:
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলগুলোর উপর ব্যাপকমাত্রায় দমনপীড়ন কার্যক্রম চালায়। এ দমনপীড়ন কখনো যৌক্তিক, আবার কখনো অযৌক্তিক হলেও বিরোধী দল ঢালাওভাবে সরকারি দলকে দোষীসাব্যস্ত করে দমনপীড়ন রোধে হরতালের ডাক দেয়।
৭. যুদ্ধাপরাধী ইস্যু:
সাম্প্রতিককালে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুকে কেন্দ্র করে হরতাল আহ্বানের ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪২ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলছে। আর এ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম ও রায়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার সমমনা দলগুলো হরতালের ডাক দিচ্ছে।
৮. বন্দি ব্যক্তিদের মুক্তি:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিম্নমানের হওয়ায় এখানে গণতন্ত্র চর্চা খুব একটা লক্ষ করা যায় না। ফলে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপর দমন, নির্যাতন ও বন্দি করে রাখার মতো ঘটনা অহরহ চোখে পড়ে। বিরোধী দল তার বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে পুনঃপুনঃ হরতাল আহ্বান করে।
৯. দলীয়করণ:
ক্ষমতাসীন সরকারের দলীয়করণ প্রবণতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি চিরচেনা প্রত্যয়। প্রশাসন, ব্যাংক, শিক্ষাক্ষেত্র সর্বত্র সরকার দলীয় লোকদের দাপট ও প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। এ দলীয়করণ রোধকল্পেও হরতালের আহ্বান করা হয়।
১০. দুর্নীতি:
ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় লোকজন পেশিবলে দেশকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে অরাজকতার দেশ কায়েম করতে চায়। এহেন অজুহাতে আমাদের দেশে হরতালের ঘটনা ঘটে।
১১. গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার বা সংশোধন:
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার কখনো কখনো সত্যিকার অর্থে জনগণের কল্যাণে, আবার কখনো কখনো নিজ ক্ষমতার ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা সংশোধন করে থাকে। গৃহীত সিদ্ধান্ত ভালোমন্দ যাই থাকুক না কেন বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত বা সংশোধনী ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল হরতালের ডাকবেই এটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনুষঙ্গ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১২. সরকার পতন:
সরকার পতন বাংলাদেশের হরতালের একটি বড় ইস্যু। এই সরকার ব্যর্থ, গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি, নিরাপত্তা দিতে পারেনি, বেকার সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ, অগণতান্ত্রিক সরকার ইত্যাদি অভিযোগ এনে সরকার পতনের ডাক দিয়ে বিরোধী দল লাগাতার বা খণ্ড খণ্ড হরতালের আহ্বান করে।
বাংলাদেশের হরতালের বৈশিষ্ট্য/প্রকৃতি:
হরতাল প্রতিবাদের ভাষা হলেও বাংলাদেশের হরতালের অবস্থা শান্তিপূর্ণের চেয়ে ধ্বংসাত্মক এবং অগণতান্ত্রিক ও অবিবেচনা প্রসূত। নিচে বাংলাদেশের হরতালের বৈশিষ্ট্য/প্রকৃতি আলোচনা করা হলো:
১. বোমাবাজি:
বাংলাদেশে হরতাল চলাকালে বা হরতালের আগের দিন বোমাবাজির ঘটনা নব্বইয়ের দশকে শুরু হয় এবং এখনো অব্যাহত আছে। ইহা অমান্য করে কোনো যানবাহন বের হলে তা রুখতে পিকেটারদের অনুরোধের স্থান নেয় বোমা। চলন্তবাসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পরিবর্তে ছুড়ে মারা হয় বোমা। এতে সাধারণত মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
২. ভাংচুর:
বাংলাদেশে বর্তমানে হরতাল আর ভাংচুর সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। ইহা হবে অথচ হরতালের আগের রাতে কিংবা হরতালের দিন গাড়ি, দোকানপাট ভাংচুর হবে না এটা যেন আমাদের দেশে হরতালকারী ও পিকেটাররা ভাবতেই পারে না। তাই তারা হরতালের আগের রাত থেকে ভাংচুর শুরু করে এবং তা অব্যাহত রাখে হরতালের শেষ পর্যন্ত।
৩. অগ্নিসংযোগ:
অগ্নিসংযোগ বাংলাদেশের হরতালের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। বাস, ট্রাক, ট্রেন, সিএনজি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা ইত্যাদিতে হরতালে অগ্নিসংযোগ করে হরতালকারীরা নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে সরকারকে তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়।
৪. ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া:
বাংলাদেশে হরতাল মানেই পুলিশের সাথে হরতালকারীদের ধাওয়া- পাল্টাধাওয়ার চিরচেনা ও জীবন্ত দৃশ্য চোখের সামনে দগদগ করে জ্বলতে থাকে। এ ধাওয়া- পাল্টাধাওয়ায় পুলিশ যেমন টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, গরম পানি ছোড়ে, তেমনি পিকেটাররাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, বোমা নিক্ষেপ বা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে করে উভয়পক্ষের মাঝে আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
৫. বিরোধী দলের মিছিলে বাধা:
বিরোধী দল হরতাল আহ্বান করে হরতালের দিনে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে থাকে। বিরোধী দলের এ মিছিলে পুলিশের বাধা একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা। এ সময় হরতালকারীদের সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে বিরোধী দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রথম সারির নেতারাও রেহাই পান না।
৬. সরকারি দলের হরতাল বিরোধী মিছিল:
হরতালের দিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র খণ্ড খণ্ড আকারে সরকারি দলের হরতাল বিরোধী মিছিল করতে দেখা যায়। বিরোধী দলের মিছিলে পুলিশ বাধাদান করলেও ইহার বিরোধী মিছিলে পুলিশ কোনো বাধা দান করে না। ইহা মানি না, গণবিরোধী হরতালের প্রত্যাহার কর ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে এর বিরোধীরা রাজপথ কাঁপিয়ে তোলে।
৭. বিরোধী দলের কার্যালয় অবরোধ:
বাংলাদেশের হরতালে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বিরোধী দলের কার্যালয় অবরোধ। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, হরতালের দিন পুলিশ বিরোধী দলের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে, প্রয়োজনে গেট তালাবদ্ধ করে রাখে। ফলে কোনো নেতাকর্মী কার্যালয় থেকে বের হয়ে মিছিল বা পিকেটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
৮. পিকেটারদের জেলখানায় বন্দি:
হরতালের পরিস্থিতি চলাকালে পিকেটাররা যেমন ওঁতপেতে থাকে পিকেটিং কিংবা ভাংচুর অগ্নিসংযোগের লক্ষ্যে, তেমনি পুলিশও সতর্ক থাকে এদের ধাওয়া করতে। মিছিল, ভাংচুর কিংবা অগ্নিসংযোগকালে প্রায়শই পুলিশ পিকেটারদের ধরে টেনেহিচড়ে নিয়ে জেলখানায় বন্দি করে রাখে।
৯. সাংবাদিক নিপীড়ন:
বাংলাদেশের হরতালে সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনা নেহায়েত কম নয়। ফটোসাংবাদিক, ভিডিওম্যান বা সংবাদকর্মীরা পুলিশ কিংবা বিরোধী দল উভয়েরই নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হন। এতে অনেক সাংবাদিকের আহত বা নিহত হবার ঘটনা ঘটে। অনেক হরতালে সাংবাদিকদের বহনকারী যানবাহন ভাংচুর কিংবা পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশে হরতালের নেতিবাচক দিকসমূহ:
বাংলাদেশে হরতালের নেতিবাচক দিকসমূহ ব্যাপক। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. অর্থনৈতিক ক্ষতি:
বাংলাদেশের বেশির ভাগ হরতালের ইস্যু রাজনৈতিক হলেও, অর্থনীতিরই ক্ষতি বেশি হয়। ৩ এপ্রিল ২০১৩ ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। উক্ত সম্মেলনে ডিসিসিআই-এর সভাপতি আব্দুস সবুর খান হরতালে দেশের অর্থনীতির ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরেন। আব্দুস সবুর খানের দেয়া তথ্য মতে, একদিনের হরতালে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয় ১৬০০ কোটি টাকা বা ২০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এক বছরে ৪০ দিনের হরতালে গড়ে দেশের ক্ষতি হয় ৬৪,০০০ কোটি টাকা।
উক্ত রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়, একদিনের হরতালে গার্মেন্টস শিল্পে ৩৬০ কোটি টাকা, সরকারের রাজস্ব খাতে ২৫০ কোটি টাকা, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ১০০ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৬০ কোটি টাকা, শিক্ষা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পর্যটন খাতে ৫০ কোটি টাকা, বীমা খাতে ১৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৬৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়।
২. প্রাণহানি:
বাংলাদেশের হরতালে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কখনো পুলিশ, কখনো পিকেটার, আবার কখনো উভয়পক্ষের প্রাণহানি ঘটে। এতে নিহত ব্যক্তির পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অমানিশার ঘোর অন্ধকারে পতিত হয়।
৩. বিনিয়োগে বাধা:
হরতালের কারণে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল অবস্থায় পতিত হয়। এতে করে বিদেশী বিনিয়োগকারী ঝুঁকির মুখে বিনিয়োগ করতে উৎসাহবোধ করে না। ফলে দেশের শিল্পকারখানা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
৪. হয়রানি:
বাংলাদেশের হরতালের একটি উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক দিক হলো হয়রানি। পিকেটারদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও এ হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নিরপরাধ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, খেটে খাওয়া মানুষদের বেঁচে থাকার অবলম্বন হরণ, ছিনতাই, ভাংচুর ইত্যাদি।
৫. ভিতরে ও বাইরে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট:
দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হরতালে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটি হয় তা হলো ভিতরে ও বাইরে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট। অব্যাহত ও ঘন ঘন হরতাল দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে। দেশের এ অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ায় দেশি- বিদেশী বিনিয়োগকারী, দাতা সংস্থা ও দেশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা দেশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করে।
৬. শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত:
বলা হয়, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা শিক্ষা নামক জাতির এই মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে দিতে বদ্ধ পরিকার। কারণ দেশের বড় বড় পাবলিক পরীক্ষা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রমের তোয়াক্কা না করেই হরতাল আহ্বান করে রাজনীতিবিদরা। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ছেদ পড়ে, শিক্ষাঙ্গনে সেশনজট বৃদ্ধি ও সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ভুলুণ্ঠিত হয়।
৭. জরুরি চিকিৎসা ব্যাহত:
হরতালের একটি মারাত্মক ও আত্মঘাতি দিক হলো জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধা দান। অ্যাম্বুলেন্স হরতালের আওতামুক্ত হলেও বাস্তবে এ চিত্র খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। এতে করে চিকিৎসক ও চিকিৎসার অভাবে অনেকেই বাড়িতে কিংবা রাস্তায় মারা যান, যা জাতির জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
৮. রাজনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্র চর্চা ব্যাহত:
রাজনীতির প্রতি অনীহা হরতালের ধ্বংসযজ্ঞের কারণে নিরীহ মেধাবী ও দেশপ্রেমিক নাগরিকগণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণে অনীহা দেখায়। ফলে দেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্র চর্চা ব্যাহত হয়।
৯. খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ:
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এখনও এক বিরাট অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এ দরিদ্র জনগণ বোঝে না হরতালের মারপ্যাচ, বোঝে না রাজনীতির খেলা, তারা তিনবেলা পেটপুরে খেতে পারলেই সন্তুষ্ট। এ দরিদ্র জনগণ হরতালের দিনেও কাজের অন্বেষণে বের হয়। কিন্তু কখনও তারা লাঞ্ছিত হন, আবার কখনো তারা ধ্বংসযজ্ঞের বলি হয়ে বাড়ি ফিরেন।
হরতালের ইতিবাচক দিক:
হরতালের নেতিবাচক দিক বেশি থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে হরতালের ইতিবাচক দিকও পরিলক্ষিত হয়। ইতিবাচক দিকগুলো হলো:
১. ১৯৭১ সালের হরতাল:
১৯৭১ সালের ২-৬ মার্চ পর্যন্ত হরতালগুলো ডাকা হয়েছিল আধাবেলা করে এবং ৮ মার্চ থেকে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র যুদ্ধের আগে সর্বাত্মক হরতালের রূপ নেয়া অসহযোগ আন্দোলনের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১৮ দিন। এ সময়ে রিকশা ছাড়াও যান্ত্রিক যানবাহন চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। বন্ধ রাখা হয় অফিস, আদালত কল-কারখানা।
২. ১৯৯৬ সালের হরতাল:
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকার একটি প্রহসনমূলক সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। দেশ-বিদেশে এর বিন্দুমাত্র গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের হরতালকে অযৌক্তিক বলা যাবে না।
৩. সময় অপচয় রোধ:
হরতালের সময় সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল করে। এতে সহজেই যাত্রী তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না।
উপসংহার:
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে দেশে প্রায় আড়াই দশক সংসদীয় শাসন বিরাজ করছে এই ভূখণ্ডে। সংবাদপত্রের স্বাধীন মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা আছে। সামরিক শাসন, জরুরি আইন কি কিংবা এ ধরনের কোনো কোনো আইনে রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নেয়া হয় না। সভা, সমাবেশ, মিছিল করা যায় অবাধে। প্রতিবাদের ভাষা আছে অনেক। রাজনৈতিক দলগুলোকে সেটাই অনুসরণ করতে হবে।
একই সাথে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, জবাবদিহিতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবিধানিক পদ্ধতিতে ক্ষমতার পরিবর্তন—এসবও নিশ্চিত করা চাই। গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় হতে থাকলে প্রতিবাদের জন্য হরতাল পরিহার করে অন্যান্য পন্থা অনুসরণের প্রবণতাও বাড়তে থাকবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।