হ্যালো প্রিয় পাঠক আজ আপনাদের জন্য বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি কাকে বলে এবং রাজনীতির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করব। রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণাটি খুব বেশি প্রাচীন নয়। ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ (Political culture) প্রত্যয়টি প্রথম ব্যবহার করেন সিডনি ভারবা। তারপর থেকে রাজনীতি বিশ্লেষণে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পৃক্ততা ও প্রভাবের বিষয়টি আলোচনায় আসে। আধুনিক কালে প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাই তার নিজস্ব রাজনৈতিক সংস্কৃতির আবহে গড়ে উঠতে দেখা যায়। কোনো সমাজের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদানগুলো যদি সেখানকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তাহলে সে ব্যবস্থা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিকশিত হতে পারে না। আরোপিত বিধি- বিধান, নীতিপদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানগুলো তখন বিদ্যমান বিশ্বাস ও বোধের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে রাজনীতিতে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি করে। মোটকথা, উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতির বদৌলতে দেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন হয় ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি কাকে বলে?
রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে সাধারণ সংস্কৃতির সেই অবিচ্ছেদ্য অংশ যা একজন নাগরিকের মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ধারণা, অনুভূতি ও ঐতিহ্যের সমষ্টি; কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনীতির প্রতি ব্যক্তি ও সদস্যগণের মনোবৃত্তি ও দৃষ্টিভঙ্গির নমুনা। রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো কতকগুলো অন্তর্গত প্রবণতা ও মাত্রাবোধ।
সিডনি ভারবা বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে বাস্তবভিত্তিক বিশ্বাস, প্রকাশযোগ্য প্রতীক ও মূল্যবোধের সমষ্টি; এগুলো সেই পরিস্থিতি বা পরিবেশকে নির্দেশ করে যেখানে রাজনৈতিক ক্রিয়াকর্ম অনুষ্ঠিত হয়।’
লুসিয়ান পাই বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে কতকগুলো মনোবৃত্তি, বিশ্বাস ও অনুভূতির সমষ্টি। এগুলো কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী ধারণা ও বিধি বিধানকে নির্দেশ করে।’
আরো পড়ুনঃ যুদ্ধাপরাধ এর সংজ্ঞা | কিভাবে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় 2024
উপরিউক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায়, যে প্রক্রিয়ায় একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সংঘটিত হয়, সে সম্পর্কে একটি জাতির রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টিকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলা হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করলে এর দুটি দিক পরিলক্ষিত হয়। এগুলো হলো:
- ক. ইতিবাচক দিক,
- খ. নেতিবাচক দিক।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিবাচক দিক:
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. গণতন্ত্রকামী মানুষ:
এদেশের মানুষের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এরা গণতন্ত্রের জন্য অজস্র লড়াই করেছে। যেমন- ১৯৫২, ‘৬২, ‘৬৬, ৬৮, ‘৬৯, ‘৭০, ‘৭১, ‘৯০ সালে এরা গণতন্ত্র উদ্ধারে আত্মাহুতি দিয়েছে। ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে সালাম, বরকত, আসাদ, মতিউর, নূর হোসেনরা।
২. নিয়মিত নির্বাচন:
১৯৯১ থেকে একটি ধারাবাহিক ও নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যা রাজনীতির একটি শুভ দিক। রাজনীতিতে নির্বাচন হচ্ছে প্রাণ।
৩. জবাবদিহিতা বৃদ্ধি:
১৯৯১-পরবর্তী সময়ে জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অন্যায় আচরণের জন্য ক্ষমা চাইতে হচ্ছে অথবা ভুল স্বীকার করতে হচ্ছে।
৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা:
বহু প্রতীক্ষিত বিচার বিভাগ এখন স্বাধীন। কাজেই কেউ অন্যায় করলে এখন পার পাওয়া সহজ নয়। উজির-নাজির সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে অন্যায়কারী হলে। আইনের চোখে সকলেই সমান বলে বিবেচিত হবে।
আরো দেখুনঃ হরতাল কেন হয় | হরতালের বৈশিষ্ট্য | ইস্যুসমূহ | নেতিবাচক দিক
৫. স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে হচ্ছে। রাজনীতি থেকে দুর্নীতি এভাবে ধীরে ধীরে মুক্ত হবে আশা করা যায়।
৬. জনসচেতনতা বৃদ্ধি:
বাংলাদেশের মানুষ এখন অত্যন্ত রাজনীতিসচেতন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে তারা দৈনন্দিন রাজনৈতিক ক্রিয়া-কর্ম সম্পর্কে অবগত হচ্ছে। নিজেদের ভালমন্দ বুঝতে শিখেছে।
৭. বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি:
একটি দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অর্থনীতি সফল হলে রাজনীতিও স্বচ্ছ হয়। আর রাজনীতি স্বচ্ছ হলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। সাম্প্রতিককালে পৃথিবীর বহু দেশ ও বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে বেগবান করবে এবং রাজনীতি আরো স্বচ্ছ, জবাবদিহিপূর্ণ হবে।
৮. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা:
পূর্বের তুলনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো এখন অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। সরাসরি সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করছে। মন্দ কাজের নিন্দা করছে। এরূপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো বেশি স্বচ্ছ ও স্পষ্ট হতে বাধ্য করছে।
১. শিক্ষার হার বৃদ্ধি:
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। স্বাধীনতা-পরবর্তী উত্তরোত্তর বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। শিক্ষিত মানুষ বুঝতে বা উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের চরিত্র। ভালোমন্দ বিচার করতে সক্ষম হচ্ছে। যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে আলোর সন্ধান দেবে।
১০. অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েই চলেছে। মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটছে। শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পাচ্ছে, গর্ভকালীন মৃত্যুহার হ্রাস পাচ্ছে, নারী স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রভৃতি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ইঙ্গিত করছে। এরূপ ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক স্বাক্ষর বহন করে।
১১. তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক সংগঠন:
বাংলাদেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক দল রয়েছে। যারা নিত্য জনগণকে সচেতন করে চলেছে।
১২. অন্যান্য:
এছাড়াও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন, ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব, মানব সম্পদ বৃদ্ধি প্রভৃতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচিত।
দেখতে পারেনঃ ৪১ তম বিসিএস বাংলা প্রশ্ন সমাধান ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত
বাংলাদেশের রাজনীতির নেতিবাচক দিক:
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিবাচক দিকগুলো আলোচনা করলে পাওয়া যায় যে, প্রফেসর রেহমান সোবহান স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করেছেন সেগুলো নিম্নরূপ:
- ১. মতদ্বৈতিক চিরাচরিত শাসন,
- ২. প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটি,
- ৩. নিম্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান,
- ৪. অসুস্থ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান,
- ৫. অগণতান্ত্রিক নীতি।
নিচে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির নেতিবাচক দিকগুলো উপস্থাপন করা হলো :
১. নির্বাচন সমস্যা:
নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রাণ। আমাদের দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বস্ততা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। নির্বাচনে কারচুপি, জাল ভোট, অর্থ ব্যবহার, আইন ও পেশীশক্তির ব্যবহার রয়েছে। শিক্ষিত-বিশ্বস্ত জনপ্রিয়রা দল থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন না। মনোনয়নে গুরুত্ব দেয়া হয় পুঁজিপতি ও পেশীশক্তির অধিকারীদের। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় রাজনৈতিক স্বার্থে।
২. রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতা:
রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচনের পূর্বে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলে তা ভুলে যায়। যারা নেতৃত্বে আছেন তারা সর্বদা নেতৃত্বে থাকতে চান। সিদ্ধান্তগ্রহণে দলের প্রধানের প্রাধান্য দেখা যায়। জনগণের পৃষ্ঠপোষক ও ভাগ্য নিয়ন্ত্রক না হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে গুরুত্ব দেয়। দলীয় কোন্দল, রাজনৈতিক হ-ত্যা, ক্ষমতাসীন কর্তৃক বিরোধীদের কোণঠাসা করে রাখা, বিরোধী দলগুলোর অরাজকতা সৃষ্টি করে সরকারকে বিপর্যস্ত করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
আরো জানুনঃ ৪০ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি বাংলার প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ বিশ্লেষণ
৩. অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতা:
জনচরিত্রের দিক দিয়ে আমরা একটা অস্থির জাতি। তার প্রমাণ রাজনৈতিক দলগুলোর স্লোগানে- ‘অ্যাকশন, অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ অথবা ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো…’, ‘… গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’। এরূপ স্লোগান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিরই নামান্তর।
৪. অরাজকতা ও অনৈতিকতা:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মারামারি, লাঠালাঠি, ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও, বো-মাবাজি, গুলি, হ-ত্যা, লুটতরাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজি নিত্যনৈমত্তিক এবং স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। স্লোগান ওঠে- ‘বুবুজান অথবা ভাবীজান… বাংলা ছেড়ে চলে যান।’ কিংবা… ধইরা ধইরা জবাই কর।’
৫. সমঝোতার অভাব:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ঐকমত্যের প্রশ্নে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। যার ফলে আজও সমাধান হয়নি বাঙালি-বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দ্বন্দ্ব, স্থানীয় সরকার কাঠামো, পররাষ্ট্র নীতি। জাতীয় ঐকমত্যের অভাবেই সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের ভাঙন। পারেনি স্বাধীনতার শক্তি ও স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে চিহ্নিত করতে। ব্যর্থ হয়েছে রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের শাস্তি দিতে।
৬. ক্ষমতার অপব্যবহার:
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা ক্ষমতার মোহে মত্ত হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে দিন দিন আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। পুলিশকে সরকারি দলের সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে। ক্ষমতাবানরা ভুলেই যান ভবিষ্যতে তাদের ক্ষমতার বাইরে যেতে হবে বা হতে পারে।
৭. রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট:
বাংলাদেশের পার্লামেন্ট কমবেশি রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়েছে। কারণ পার্লামেন্টের কাজ আইন প্রণয়ন, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো আইন সংসদে গৃহীত হয় না। পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও নীতি প্রণীত হয়। তাছাড়া পার্লামেন্ট কমিটিগুলোতে রয়েছে সরকারি দলের প্রাধান্য, বিরোধী দলের বয়কট সংস্কৃতি, নিয়মিত মিটিংয়ের অভাব।
৮. দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ ও ভাবাদর্শের সংঘাত:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ ও ভাবাদর্শগত সংঘাত। ভাবাদর্শগত সংঘাত হিসেবে দেখা যায় ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করা, সমাজতন্ত্র-পুঁজিবাদ দ্বন্দ্ব। একে অপরকে গালি দিচ্ছে ভারতের-চীনের দালাল বলে, যা কখনো সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না।
৯. ধর্মীয় ও উত্তরাধিকার রাজনীতি:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ব্যাপক। এ দেশের মানুষ ধার্মিক, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। ধর্মকে ব্যবহার করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে। যেমন- ডানপন্থিরা স্লোগান দিচ্ছে- ‘নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার’, বামপন্থিরা ‘আল্লাই আকবার’ বলে।
নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক নেতারা হজে যান। মাথায় কাপড় দেন, সমাবেশে আসসালামু আলাইকুম, খোদা হাফেজ, ইনশাল্লাহ, মাশাল্লাহ শব্দ ব্যবহার করে জনগণকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করেন। উত্তরাধিকারসূত্রে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গ্রহণ করে চলেছে। নেতৃত্বে দেখা দিয়েছে শূন্যতা।
১০. যুদ্ধংদেহী দৃষ্টিভঙ্গী :
এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব যুদ্ধংদেহী। এখানে সবাই রাজা। কেউ প্রজা হতে চায় না। কেউ কাউকে মানতে চায় না। সবাই যেন সর্বদা এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
১১. স্ববিরোধিতা ও বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা:
বাংলাদেশ হচ্ছে স্ববিরোধিতার চ্যালেঞ্জে ভরা একটি দেশ। রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীরা শ্লোগান দেয় হাতে অস্ত্র নিয়ে- ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে একসাথে’ অথবা ‘অস্ত্র ছাড় কলম ধর, শিক্ষাজীবন রক্ষা কর’ প্রভৃতি। অথচ চোখের সামনেই কোমরে গোঁজা পিস্তল বা চাদরের আড়ালে বেরিয়ে পড়া রাইফেলের বাট দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে চলেছে। তারা বিরোধীদের ভালোকে ভালো বলতে ভুলে গেছে।
১২. শাসকগোষ্ঠীর দুর্বলতা:
বাংলাদেশের নির্ভরশীল শাসকশ্রেণী অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন। জনগণের স্বার্থে তাদের কোনোকিছুই করার ক্ষমতা নেই। কারণ তাদের রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশক্তির চাপ। কোনো নীতি নির্ধারণে দাতাগোষ্ঠীর মতামতকে প্রাধান্য দিতে হয়। এজন্য ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীনরা একের পর এক ভুয়া বা ফাঁকা ইস্যু নিয়ে পরস্পরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে। তাদের প্রচারমাধ্যমগুলো এ নিয়েই ব্যাপকভাবে ঢেঁড়ি পেটায়। এ দিয়ে কেবল রাজনৈতিক আবহাওয়াই উত্তপ্ত হয়, জনগণের উপকারে কিছুই আসে না।
উপসংহার:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অভিজ্ঞমহল অভিহিত করেছেন খণ্ডিতরূপে। সুস্থ রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে গড়ে উঠবে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। দেশ ও জনতা আশাবাদী- গণতন্ত্রের বন্ধুর পথ যাত্রার মধ্য দিয়ে আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য নির্ধারিত হবে। কোটি কোটি মুক্তি উদ্বেল মানুষ ‘যত মত তত পথের’ মাঝেও খুঁজে পাবে অভীষ্ট গন্তব্য।